তনু কাকা কোনো মানুষকে দেখলে তাৎক্ষণিক মন্তব্য করে না। এই মানুষটাকে দেখেই বলে উঠল, ভোগাবে।
ভোগানোর মতো চেহারা অবশ্য মনে হয় না। সাধারণ ফুল প্যান্টের সঙ্গে ছাই রঙা শার্ট। ইন করেছেন এলেবেলে ভঙ্গিতে। চোখের চশমায়ও কোনো বিশেষত্ব নেই। কিছু মানুষ থাকে, যাদের দেখলে মনে হয় এরা কোনো পরিস্থিতিকেই প্রভাবিত করতে পারবে নাÑএঁর চেহারা সে রকমই। কারো লাভ বা ক্ষতি করতে অক্ষম একটা সাদামাটা মানুষের ছবি।
কাকা দোতলা থেকে দেখছিল। নেমে সামনে দাঁড়াতেই মানুষটা বিস্মিত হয়ে বললেন, ‘আপনিই…’
এই প্রশ্নের মানে নানা রকম হওয়া সম্ভব। আপনিই কি সেই লোক, যাকে আমি খুঁজছিÑএমন জিজ্ঞাসাও হতে পারে। আবার হতে পারে, ও, আচ্ছা, আপনি এত সাধারণ! আমি তো অন্য রকম ভেবেছিলাম।
কাকা হাসল। ‘আমিই…’
‘আপনিই তাহলে…’
‘আমিই আসলে…’
বেশ মজার ব্যাপার। মূল ভাব থেকে দূরে থেকে দুজনই সাইড দিয়ে খেলছে। কাকার ক্ষেত্রে মানুষটাকে বাজিয়ে দেখা। মানুষটার বেলায়, বিস্ময়।
খেলা শেষ হয়। মানুষটা বিনীত হয়ে বলেন, ‘গোয়েন্দা-টোয়েন্দা সিনেমার বাইরে আমরা তো কখনো দেখিনি। তা সিনেমায় যেমন দেখানো হয় তাতে এদেরকে আর সাধারণ মানুষ মনে হয় না।’
‘তা অবশ্য ঠিক।’ কাকা গায়ের চাদরটা ঠিক করতে করতে বলে, ‘সিনেমার গোয়েন্দারা দেখতে সুদর্শন হয়। সাধারণত নায়করাই ওই চরিত্রে অভিনয় করে কি না। চাইলেও খারাপ চেহারার গোয়েন্দা তাই সিনেমায় পাওয়া যাবে না।’
মানুষটার যা অধোবদন চেহারা এতক্ষণ দেখছিলাম তাতে দ্বিমত করার কোনো কথা নয়। তাছাড়া যারা কাজ বাগাতে আসে তারা সূর্য পশ্চিম দিকে ওঠেÑএমন বক্তব্যের সঙ্গেও একমত হয়ে যায়।
মানুষটি এই প্রথম একটু ধাক্কা দিলেন। কাকার সঙ্গে গলা না মিলিয়ে বলেন, ‘সব্যসাচী ফেলুদার চরিত্রে অভিনয় করে। তাঁর চেহারা তো তেমন…’
কাকার ভাবনায় পড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু পাল্টা তাস ফেলে বলে, ‘আমার চেহারা সব্যসাচীর চেয়ে ভালো না খারাপ?’
‘না সে কথা নয়…’
‘তাহলে কোন কথা?’
‘আপনার চেহারা যথেষ্ট ভালো।’
‘সব্যসাচীর চেয়ে ভালো না খারাপ?’
‘চেহারার কি ওরকম তুলনা চলে?’
‘চালালে চলে।’
‘ঠিক আছে এই প্রসঙ্গ বাদ দিই।’
‘প্রসঙ্গ উঠলে শেষ না করা পর্যন্ত বাদ দেয়ার অভ্যাস আমার নেই।’
‘আপনার চেহারা সব্যসাচীর চেয়ে ভালো। ওঁর মুখে গোটা গোটা দাগ।’
‘অপারেশন কুয়ালা লামপুর’ পাওয়া যাবে বইমেলায় পার্ল পাবলিকেশনের প্যাভিলিয়নে।