সগীর স্যারের আজ বিদায়ী সংবর্ধনা। বিশ বছর বিদ্যাময়ী স্কুলে পড়িয়ে তিনি অবসর নিচ্ছেন। এ উপলক্ষে রাত জেগে ছাত্ররা তার জন্য একটা মানপত্র লিখেছে। হেড স্যার স্কুল ফান্ডের কিছু টাকার সঙ্গে ছাত্রদের সবার কাছ থেকে চাঁদা দিয়েছেন একশ’ টাকা করে। তাই দিয়ে জেলা শহর থেকে কিনে আনা হয়েছে বিস্তর উপহার।
সগীর স্যারের আজ বিদায়ী সংবর্ধনা। বিশ বছর বিদ্যাময়ী স্কুলে পড়িয়ে তিনি অবসর নিচ্ছেন। এ উপলক্ষে রাত জেগে ছাত্ররা তার জন্য একটা মানপত্র লিখেছে। হেড স্যার স্কুল ফান্ডের কিছু টাকার সঙ্গে ছাত্রদের সবার কাছ থেকে চাঁদা দিয়েছেন একশ’ টাকা করে। তাই দিয়ে জেলা শহর থেকে কিনে আনা হয়েছে বিস্তর উপহার। কী কী উপহার সেটা অবশ্য জানা যাচ্ছে না। কেউ জানতে চাইলেই হেড স্যার বলছেন, ‘মিস্ট্রি। মিস্ট্রি থাকুক।’
অঙ্ক স্যার কানে একটু কম শোনেন। তাছাড়া ইংরেজি তার অপছন্দের বিষয় বলে সেটার খুব চর্চা করেন না। তিনি শুনলেন, ‘মিষ্টি। মিষ্টি।’
শুনে প্রথমে একটু থমকে থাকলেন। যেকোনো কথা শুনলেই তিনি একটু দম মেরে যান। গবেষণা করেন। তার মতে, কথা বলতে হয় ভেবে। আর কাজ করতে হয় না ভেবে।
তিনি ভাবতে থাকলেন। এতগুলো টাকা দিয়ে কিনা মিষ্টি কিনে আনা হয়েছে। বিস্তর নয়-ছয়। হেড স্যার অবশ্য নয়-ছয় করায় ওস্তাদ। লোকে বলে, নিজের এক পকেটের টাকা আরেক পকেটে ঢোকানোর ফাঁকেও তিনি কিছু টাকা সরিয়ে ফেলেন। বেশ বড় দাঁও মেরেছেন। নইলে তার এত উৎসাহ থাকবে কেন? সগীরউদ্দিন এমন কি ঘোড়ার ডিম করেছেন যে তার বিদায় উপলক্ষে জমকালো সংবর্ধনা আয়োজন করতে হবে। ক্লাসে তিনি প্রায়ই ঘুমিয়ে যেতেন। শোনা যায়, নাকও ডাকতেন। হেড স্যার সগীর সাহেবকে বিদায়ের জন্য এমন উঠেপড়ে লেগেছিলেন যে তিনি থানা শিক্ষা অফিসারকে কয়েক দফা চিঠি লিখেন। কাজ না হওয়াতে পরে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে জেলা পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছান। সগীর সাহেবের বিদায় সে হিসেবে তার জন্য আনন্দের বিষয়। অথচ এমন ভাব করছেন যেন এর চেয়ে দুঃখের বিষয় আর হয় না। স্যারদের জন্য চাঁদা ধরা হলো, দুইশ’ টাকা করে। কেউ কেউ দিতে গাঁইগুঁই করাতে তিনি শিক্ষকের মর্যাদা, সগীর সাহেবের কৃতিত্ব মিলিয়ে লম্বা লেকচার দিলেন। অ্যাসিস্ট্যান্ট হেড মাস্টার শেষে বললেন, ‘থাক, থাক। আপনার এসব শোনার চেয়ে টাকা দিয়ে দেয়াই ভালো।’ অন্য সময় হলে জ্বলে উঠতেন হেড স্যার। এবার মিষ্টি গলায় বললেন, ‘তাহলে তাই হোক। এমন একটা জম্পেশ আয়োজন করি, যেন তিন তল্লাটের সবাই বলে আমরা আমাদের সহকর্মীদের সম্মান দিতে জানি।’
অঙ্ক স্যার সাদউদ্দিন অঙ্কে লেগে যান। সব মিলিয়ে উঠেছে হাজার বিশেক টাকা। উপহারের দুই প্যাকেটে যদি মিষ্টি থাকে তাহলে সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি মিষ্টি ধরতে পারে। পনেরোশ’ টাকা। বাড়িয়ে-টাড়িয়ে ধরলেও দুই হাজার। এর বাইরে চেয়ার-টেবিল আনায় কিছু খরচা গেছে, মাইক-মঞ্চ মিলিয়েও আরো কিছু। তাহলেও তো হাজার পাঁচেক টাকা পকেটে। তিনি সন্তর্পণে হেড স্যারের পকেটের দিকে তাকান এবং তার স্ফীত পাঞ্জাবির পকেট থেকে নিশ্চিত হয়ে যান যে বড় দান আনোয়ার খান মেরে দিয়েছেন।
কথাটা বাকিদের জানানোও দরকার। কাজ হবে কি না বুঝতে পারছেন না। এই স্কুলের ছাত্ররা অঙ্কে কাঁচা। শিক্ষকরা এর চেয়েও বেশি কাঁচা। লুট-আত্মসাৎ এরা ঠিক বুঝতে পারেন না বলেই হেড স্যার এমন চালিয়ে যাচ্ছেন। তবু জনমত সংগঠিত করতে হবে। অঙ্কের শিক্ষক হিসেবে এটা তার দায়িত্বও। প্রথমে পেলেন ইতিহাসের অমর সেনকে। ফিসফিস করে বললেন, ‘পুকুর চুরি হচ্ছে।’
Gallery Empty !