![Mustafa Mamun](https://mustafamamun.com/wp-content/uploads/2021/12/MM-Logo-BJ.png)
আশিক ঠিক বুঝতে না পেরে বলল, ‘কিসের জন্য প্রতিবাদ?’ ‘জুতা দেবে কেন? জুতা দেয়া মানে কী!’ একাদশ-খেলা ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত ছিল বলে জুতার বিষয়টা মাথা থেকে চলে গিয়েছিল। এখন মনে পড়ল, টিভি আর অনলাইনে জুতা উপহারের বিষয়টা দেখেছে। সে হাসতে হাসতে বলল, ‘এটাকে এত সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই। এটা একটা উপহার মাত্র।’
টক শোতে গিয়ে অবশ্য পড়ল মহাবিপদে। এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এসেছেন। খেলা নিয়ে তার তুমুল আগ্রহ। নিজের ফেসবুক পেজে আবেগে ভাসিয়ে দেন ম্যাচের সময়। তিনি সরাসরি বললেন, ‘বাংলাদেশের উচিত আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদ জানানো। যদিও এই সাহস আমাদের আছে কি না সন্দেহ। আমরা তো ভারতের কাছে নাকে খত দিয়ে রেখেছি।’
আশিক ঠিক বুঝতে না পেরে বলল, ‘কিসের জন্য প্রতিবাদ?’
‘জুতা দেবে কেন? জুতা দেয়া মানে কী!’
একাদশ-খেলা ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত ছিল বলে জুতার বিষয়টা মাথা থেকে চলে গিয়েছিল। এখন মনে পড়ল, টিভি আর অনলাইনে জুতা উপহারের বিষয়টা দেখেছে।
সে হাসতে হাসতে বলল, ‘এটাকে এত সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই। এটা একটা উপহার মাত্র।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তেড়ে ওঠেন। আরেক রাজনীতি বিশেষজ্ঞ টক শোবিশারদও আছেন আলোচনায়। তিনি অবাক হয়ে বলেন, ‘বলছেন কী! দেশের মুখে জুতা দেয়াটাকে আপনার কাছে সিরিয়াস কোনো বিষয় মনে হচ্ছে না?’ তিনি তার দেশপ্রেমহীনতায় আফসোসে মাথা নাড়তে থাকেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এতই বিস্মিত যে তার কথা বন্ধ হয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি একটু পেছনে গিয়ে জুতার ব্যাপারটা খেয়াল করি…। এই জুতা একজন খেলোয়াড়কে দেয়া হয়নি। এটা দেয়া হয়েছে আমাদের সবার মুখে।’ বলে তিনি মুখটা এমন বেঁকিয়ে নেন, যেন জুতার আঘাতেই মুখটার এই দশা।
আশিকের আবার হাসি পেয়ে যায়।
উপস্থাপক ছেলেটা সাংবাদিক। সে-ও এক-আধটু বিষয়টা জানে। কিন্তু এ-ও জানে টিআরপি জুতার পক্ষে। বলে, ‘আশিক ভাই যদি ব্যাখ্যা করে বলতেন কেন আপনার কাছে জুতা দেয়াটাকে বড় কোনো ঘটনা মনে
হচ্ছে না।’
‘দেখেন, অনন্ত একজন বোলার। একজন বোলারকে উপহার হিসাবে জুতা দেয়া খুব অস্বাভাবিক নয়। পেস বোলারের জন্য জুতা খুবই প্রয়োজনীয় একটা জিনিস।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হাসেন, ‘বোলারকে বল দেবে। জুতা দেবে কেন? এটা অপমান করার জন্যই।’
আশিক বলে, ‘আমার মনে হয় না উপহারের পেছনে এ রকম কোনো ভাবনা থাকে। বল সাধারণত কেউ দেয় না। কারণ, নিজের কাছে রাখা বল দিয়ে কেউ প্র্যাকটিস করে না। ক্রিকেটে জুতা, গ্লাভস, ব্যাটÑএগুলো আপনার। বলটা কিন্তু কর্তৃপক্ষের। কারণ বলের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে।’
এবার বিশেষজ্ঞদের একটু থামতে হয়। অতশত তো আর ওরা জানেন না। কিন্তু আবার থামলে বিশেষজ্ঞতাও থাকে না। এরা সর্ববিষয়ে বিশারদ বলে সামালও দিতে জানেন। সুন্দরভাবে জনমত নিজেদের দিকে টেনে নেয়ার একটা কায়দা করেন।
বলেন, ‘আপনি জটিল ক্রিকেটীয় বিষয় দিয়ে আমাদের থামিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু আমরা সাধারণ মানুষ। বুঝি সহজভাবে। জুতা দেয়া এই দেশের সাধারণ মানুষকে অপমান করা। ষোল কোটি মানুষকে অপমান করা।’
অন্যজনও মাথা নাড়েন। আশিক বুঝতে পারে এই লড়াইয়ে খুব বেশি মানুষ ওর সঙ্গে নেই। তবু লড়াইটা করতে হবে। সাধারণ মানুষের দোষ কী, এসব বিশেষজ্ঞতাতেই তৈরি হচ্ছে ভুল মত, সেই ভুলের স্রোত ক্রিকেটটাকে প্রায় গিলে ফেলছে।
আশিক বলে, ‘২০০৪ সালে সৌরভ গাঙ্গুলী তখন ভারতের অধিনায়ক। ওর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন শোয়েব আখতার। কী উপহার নিয়ে বের হয়েছিলেন জানেন?’
‘কী?’ বিশেষজ্ঞরা তাচ্ছিল্যের সঙ্গে জানতে চান।
‘এক জুড়া জুতা।’
‘এর মানে এই ভারতীয়রা সবাইকে জুতা দিয়ে আসছে।’
‘জি, সবাইকে জুতা দিয়ে আসছে। কিন্তু পাকিস্তানে সেই সময় কোথাও এই আলোচনা হয়নি যে সৌরভ পাকিস্তানকে জুতা দিয়েছেন। আলোচনা হয়েছে, দুই দেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে এই যে হƒদ্যতা সেটা রাজনীতিতেও আনা যায় কি না।’
এরপর বিশেষজ্ঞের থেমে যাওয়ার কথা। কিন্তু তিনি গর্জে ওঠেন, ‘আপনি পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করলেন! পাকিস্তানের সঙ্গে… আপনার সঙ্গে তো আর কথাই চলে না। আপনি ইতিহাস-রাজনীতির কী জানেন? এই পাকিস্তানের সঙ্গে লড়াই করে, ওরা যা করে সেগুলো বর্জন করেই না আজকের বাংলাদেশ। আপনার এই বক্তব্য আমাদের চেতনার প্রতি নিষ্ঠুর আঘাত। উইথড্র করেন। আপনার বক্তব্য উইথড্র করেন।’
আশিক হাসে, ‘আপনি কথা অন্যদিকে নিয়ে যাচ্ছেন।’
‘আপনি যা ইচ্ছা বলবেন আর আমরা চুপ করে থাকব! আপনার তো পাকিস্তানের টেলিভিশনে যাওয়া উচিত।’
টক শো শেষ হলো প্রচ- উত্তেজনায়। উপস্থাপক ছেলেটা ঠিক বুঝতে পারছে না অনুষ্ঠানটা ভালো হলো না খারাপ হলো। সে একটু ফেসবুক দেখে। চুপি-চুপি ওর পেছনে গিয়ে আশিকও দেখে। গালাগালিতে সয়লাব। ও যদিও বেশি গাল খেয়েছে কিন্তু একা গাল খায়নি। চেতনাবাজ হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরও কম গালি জোটেনি। এটাই যা কিছু সান্ত¡নার।
বাইরে বেরিয়ে ইশতিয়াককে বলল, ‘আমি তো ভাবলাম দল নিয়ে আলোচনা হবে। খেলাতে তো যেতেই পারলাম না।’
ইশতিয়াক বলেন, ‘অসুবিধা নেই। টিআরপি হাই ছিল। জমজমাট হয়েছে।’
নিচে নেমে সিগারেট ধরাতে গেছেন। সেই সময়ই পিয়ন দৌড়ে এসে ইশতিয়াককে কানে কানে কী যেন বলে। ইশতিয়াকের মুখটা একটু শুকিয়ে যায়। বলেন, ‘তুমি সিগারেটটা ধরাও। আমি আসছি।’
‘তলব? সিইও?’
‘হুঁ।’
‘আমি বোধহয় আপনাকে ঝামেলায় ফেলে দিলাম। কী করব, এমন সব মূর্খের মতো কথা…’
nazirscc –
অসাধারণ উপন্যাস। একবার পড়া শুরু করে শেষ না করা পর্যন্ত থেমে থাকা কঠিন।